শেষ বেলার অস্তমিত সূর্যের দিকে
তাকিয়ে আছে নীতিমালা।পাশে বসে অমিতাভ।আর সব চুপচাপ।শুধু সমুদ্রের গুরুগম্ভীর
গর্জন ছাড়া।দুজনের মুখেই ঘন প্রশান্তির ছায়া।অমিতাভ পাশ থেকে বলে ওঠে,কি ভাবছো নীতি?জীবনের তিরিশ টা বছরের
ঘটে যাওয়া সমস্তটার হিসাব মিলাতে বসলে নাকি?নীতিমালা
বলে একটু হেসে,হ্যাঁগো ভাবছি সুদূর বিদেশে খোকা এখন কি খাচ্ছে?অমিতাভ যেন একটু বিরক্ত হয়।নীতি এতদিন ধরে তো খোকা কেই বড়
করতে কাটিয়ে দিলে।ভাবো তো বিয়ের পর সেই যে আমরা একা দুজনে বেড়াতে
গেছিলাম।পাহাড়ের কোলে।কত মজা হয়েছিলো।তারপর এক বছরের মধ্যে খোকা হোল।আমার
ডার্লিং হয়ে গেল খোকার মা।আমি বাবা।তারপর সময় পাইনি তোমার সাথে
একটু মনের কথা গুলো ভাগ করে নেওয়ার।তোমার মনে পড়ে মা যখন অসুস্থ হোল তুমি আর আমি
রাত জেগে বসে থাকতাম।তখন খোকার মাধ্যমিক সামনেই।যখন আমার ব্যাবসা মার খেলো তখন সব
আত্মীয় স্বজনের মুখোশ গুলো খুলেগেল।খোকার পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য তুমি হাতে
সেলাই শিখে কোথায় গিয়ে যেন একটা বিক্রি করতে।
কেরোসিনের দোকানে লাইন দিয়ে ভারী
রেশন তুলে আনতে একটু সস্তা পড়বে বলে।তারপর কখন সময়ের যাতাকলে পিষতে পিষতে তিরিশ
টা বছর কেটেগেল।বাবা মা সবাই বিদায় নিলো সংসারের কর্তব্য শেষ করে।দেখতে দেখতে
তোমার চুলে পাক ধরল।খোকার বিয়ে হোল।মনে আছে তোমার,যখন
খোকা কে নিয়ে বৌমা কে নিয়ে একসাথে থাকার স্বপ্ন দেখছিলাম দুজনে তখন খোকা একদিন
রাতে এসে বলেছিলো সব ব্যাপারে যেন ওদের আমরা বিরক্ত না করি।ওদেরও একটা খোলা
জায়গার দরকার?তখন আমি ভেবেছিলাম বলবো,হ্যাঁ
রে খোকা তুই যখন ছোট ছিলিস তখন আমি আর তোর মা তো নিজের সমস্ত টা ভুলে তোর পেছনে
এতগুলো বছর কাটিয়ে দিয়েছি।কই আমাদের তো এসব ভুলেও মনে হয়নি।কিন্তু বলতে পারিনি
কারন তুমি পেছন থেকে হাত চেপে ধরেছিলে আর বলেছিলে ঠিক বলেছিস বাবা,তোদের মাঝখানে আমরা ঢুকে যাই।জানি এটা সবসময় করা ঠিক না
কিন্তু মায়া খুব খারাপ জিনিস বাবা।তুই বাবা হ,তারপর
বুঝবি।নীতি বলে,দেখো অমিত সবারই একটা নিজস্ব জায়গা থাকা দরকার।খোকার উপর
অভিমান কোরোনা মিছিমিছি।
অমিতাভ বলে ঠিক এই কথাটাই আমিও তোমায়
বোঝাতে চাইছি নীতি।জীবনের অনেকটা সময় পার করে এসেছি।প্রেম যখন করেছিলাম তোমার
সাথে তখন হাতে যেমন অফুরান
সময় ছিলো।তারপর আবার এই
বুঝি সময় পেলাম।তাই চলো এখানে এসে খোকা কে নিয়ে চিন্তা না করে মন টা ভাঁসিয়ে দি
এই স্রোতে।সেই হানিমুনে গিয়ে রাতদিনের হিসাব মেলাতে পারতামনা যেমন ঠিক তেমন
করে।এক মুঠো আকাশ হাতে নিয়ে দেখোইনা।হাসিমুখে উঠে দাঁড়ালো দুজনে।তখনকার শরীর
মনের টান টা আজ পরস্পরের মনের গভীর টানে পরিনত হয়েছে।আজ আবার দুজনে
ফাঁকা।নীতিমালা যেন একটু লজ্জা পায়।অমিতাভ হেসে বলে,কি ভাবছো নীতি।বুড়ো বয়সের আদিখ্যেতা।বুড়ো বয়সের প্রেম
আরো জোড়ালো হয়।প্রেম চিরন্তন।এর কোন বয়স নেই।নীতি বলে অমিত তুমি ওই গান টা গাও
সেই যে পুরোন দিনের সিনেমার সেই গান।আমাদের সময়ের গান যেটা তুমি কলেজে খুব
গাইতে।অমিতাভ উদাত্ত কন্ঠে গায় "এই শহর থেকে আরো অনেক দূরে চল কোথাও চলে যাই,ওই আকাশ টাকে শুধু চোখে রেখে মনটা কে কোথাও
হারাই"।নীতি লক্ষ করে ওর কাঁধে সেই পরিচিত হাতের পরশ।অনেকদিন পরে অদ্ভুত এক
ভালোলাগায় মনে ভরে ওঠে নীতিমালার।অমিতাভ বলে এই তো জীবন শুরু হোল।সব দায়
শেষ।এবার দুজনে দুজনের জন্য বাঁচবো।ধরে নাও এই আমাদের দ্বিতীয় হানিমুন।আকাশে তখন সূর্য
নেই।ঢলে পড়েছে সাগরের কোলে।লাল রঙের রেখাটা যেন ওদের দুজনের চলার সাথী হয়ে
প্রমান্স্বরূপ জ্বলজ্বল করছে আকাশের গায়ে।
লেখিকাঃ রিনি
ভট্টাচার্য (কলকাতা)
লেখা পাঠানোর নিয়মাবলী
আপনারা আপনাদের মূল্যবান লেখা নির্দ্বিধায় আমাদের কাছে পাঠাতে পারেন। আমরা তা আমাদের অনলাইন ম্যাগাজিনে প্রকাশ করব।
ইমেল আইডি: contact.okopotanusandhan@gmail.com
লেখার ফরম্যাট: অভ্র ইউনিফাইড টাইপ কিপ্যাডে টাইপ করে লেখা পাঠাতে হবে।
ইমেলে যা উল্লেখ করবেন: আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং কোন ক্যাটাগরিতে লিখছেন তা উল্লেখ করতে ভুলবেন না।
