সমাজ আবর্তিত সংস্কারে সংস্কার আচ্ছাদিত কুসংস্কারে-সত্যেন্দ্রনাথ পাইন || প্রবন্ধ || অকপট অনুসন্ধান

0

 সমাজ আবর্তিত সংস্কারে সংস্কার আচ্ছাদিত কুসংস্কারে-সত্যেন্দ্রনাথ পাইন


নিয়ম শৃঙ্খলা অভ্যাস প্রথাগত। প্রথা আবার পরিবেশ পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন। দৈনিক আচার অনুষ্ঠান যেখানে কোনো বাধা মানে না।মানুষ দায়বদ্ধ না হয়েও দায়ী হয়ে পড়ে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে মানসিক অবস্থান বদলাতে বাধ্য হয়। সেটাকেই হয়তো সংস্কার বলা হয়। কিন্তু সংস্কার যদি অন্ধ আবেগে বশীভূত হয়ে সেটাকে কুপথে চালিত করে সেটাই হয় কুসংস্কার।এই কুসংস্কার আবার বিজ্ঞান সম্মত কি না ভেবেও মানতে বাধ্য হই "স্রেফ" শান্তি (!) বজায় রক্ষার তাড়নায়। সেটাই আমার আলোচ্য বিষয়। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথকে উল্লেখ করে বলি---

; যে জাতি জীবনহারা অচল অসাড়/ পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার। কিং বা----

২! যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে/ সহস্র শৈবাল দাম বাঁধে আসি তারে

এসব শুধু বইয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে? সমাজবদ্ধ মানুষ লেখাপড়ায় শিক্ষিত হয়েও জ্ঞানী হতে পারেনি। কেন এই ভুল সংস্কারে কেউ প্রতিবাদে মুখর হচ্ছে না ? কিসের ভয়! কীসের আতঙ্ক!?

কোনো প্রসুতি সন্তান প্রসব করার পর সে  ' আঁতুড়ঘরে ' ২১ দিন বা ১ মাস গৃহবন্দি থাকে-- এটা সম্পূর্ণ বিজ্ঞান ভিত্তিক। নবজাতকের মধ্যে ভাইরাস- আক্রান্ত যাতে না হয় তাই তাকে বাইরের আবহাওয়া য় শরীরকে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করা--- । এটা নিয়ম নয়--- এটা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত-- বিজ্ঞান তাই বলে। আগন্তুক ব্যক্তি নবজাতক কে অযথা নাড়াচাড়া করলে বাচ্চার শরীরের ক্ষতি হতে পারে জেনেই কমপক্ষে ঐ কটা দিন সংরক্ষিত রাখার বিধান। কিন্তু আঁতুড়ঘরে প্রবেশ করে প্রসুতিকে বা নবজাতককে স্পর্শ করলে অচ্ছুৎ হবে এই ভাবনায় গঙ্গা স্নান করা বা তৎক্ষণাৎ অচ্ছুৎ হয়ে গেছি-- এই চিন্তাই হোল কুসংস্কার আচ্ছাদিত। অতএব বর্জনীয়।

নবজাতক তো ঈশ্বর প্রেরিত নবদূত। সেই নবদূতকে ঘৃণা করার অর্থ ঈশ্বরকে অবমাননা করা বা ঘৃণা করা বোঝায়--.! এটা মোটেও কাঙ্খিত কি??সমাজবিজ্ঞানী রা বলেন-- সমাজের উন্নতি সাধনে অনেক কিছুই গ্রহণীয় না হয়েও মেনে নিতে হয়। তাই বলে অন্ধ সংস্কার মেনে নেওয়া বড়ই বেদনাদায়ক। এবং চিন্তাশীল মানুষের পক্ষে মেনে চলা বড়ই কঠিন।

অতীতে দেখেছি মেয়েদের জন্য ( দক্ষিন ভারতে) কোমরের ওপর জামা পরা ছিল নিষিদ্ধ। এক দক্ষিণী মেয়ে প্রতিবাদ করে জামা পরেছিল বলে তৎকালীন ব্রাহ্মণেরা তার বিচারের আয়োজন করলে মেয়েটি তার স্তন দুটো কেটে বিচারের প্রহসন বন্ধ করেছিল।এরপর থেকে সমাজ বিবর্তিত হয়েছে। ব্রাহ্মণের মানসিক অত্যাচার বন্ধ হয়েছে। সমাজের সংস্কার সাধিত হয়েছে। এখন পোশাকে ঢাকা নারীর* মানবদেহ।"

যদিও সেই পোশাকের বিবর্তনে এখন আবার নগ্নতার বিপুল সম্ভার। এটা সংস্কার নয় আবার কুসংস্কার ও নয় বটে---! শুধুই পশ্চিমীসভ্যতার অনুকরণীয় অসভ্যতামি ছাড়া কিছুই নয় বলেই আমার মনে হয়। যাক্ সে অন্য কথা --অন্য সময় আলোচনা করা হবে যদি সময় ও সুযোগ থাকে।

কন্যাসন্তান কিশোরী থেকে বালিকাতে রূপান্তরিত হবার ব্যাপারে যে প্রথম ঋতুমতী হোল সেটা বুঝিয়ে মেয়েদের কে অচ্ছুৎ করে রাখার প্রয়াস পুরুষশাসিত সমাজের জন্য আরও এক জঘন্য অত্যাচার ছাড়া কিছু নয়। ভাবুন তো যদি নারীদের এ অবস্থা না হোত তাহলে আমি, আপনি ও আপামর পৃথিবীতে জন্ম নিতাম কি করে? মা বসুন্ধরাও তো রজঃস্বলা হন। যার ফলস্বরূপ আমরা বাংলায় অম্বুবাচি পালন করি। অর্থাৎ মা বসুন্ধরাকে এবং চাষের যাবতীয় উপকরণের বিশ্রাম দেয়ার রেওয়াজ। চাষী, মজুর, গরু, লাঙল সকলেরই খানিক বিরতি। সেই রকম কন্যাসন্তানের রজঃস্বলা অবস্থায় বিশ্রাম দেওয়াই বিধেয় হোওয়াই কাম্য। নোংরা ও ঘৃণ্য মনে করে অচ্ছুৎ করে রাখার প্রয়াস মেনে নেওয়া যায় না। অনেক রকম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আজকের মেয়েরা অবশ্য শরীরচর্চা করে, ক্রিকেট খেলে, ফুটবল খেলে, এ্যাথলেটিক্সে সোনা জেতে। অতএব সংস্কার হয়েছে। কুসংস্কারকে মেয়েরাই শক্তি দিয়ে বুদ্ধি দিয়ে তাকে জয় করেছে।

আমাদের বাংলায় সতীদাহ প্রথা কী নির্মম অবস্থায় ছিল তা ইতিহাস পড়ে জানতে পারি। রাজা রাম মোহন রায় সেই প্রথা উচ্ছেদের জন্য যদি প্রয়াসী না হতেন তাহলে আজ সমাজের বিধবা মায়েরা কী শান্তিতে বেঁচে থাকতে পারতেন? কল্পনা করে দেখার অনুরোধ জানাই।

 এরমধ্যে ব্রাহ্মণকূলের নানাবিধ বিধান ও নিয়ম একেবারেই অমূলক। মানুষ আপন পথে চলুক--- কিন্তু ব্রাহ্মণ জাতির জন্য সামাজিক নিয়মকানুন শিথিল কেন? এবং অন্যান্য জাতির ( বৈশ্য, ক্ষত্রিয়, শূদ্রের )জন্য অতীব নির্মম কেন? আমরা সবাই তো মানুষ। তবে "ক্ষতি" হবার ভয় দেখিয়ে শাস্ত্রীয় ( অ-শাস্ত্রীঢয়) প্রথায় অপর জাতিকে বেঁধে রাখার মানসিকতা কেন?এটা কি শুধু বাঁচার জন্য হীন টাকা রোজগারের এক অন্য ফিকির? তাই স়ংস্কারমুক্ত হয়ে কুসংস্কার কে ত্যাগ করার জন্য দৃঢ় মানসিকতা চাই। মোমবাতি মিছিলে ফল হবে না বলেই মনে হয়।তবে জাগরণের ও প্রয়োজন আছে বৈকি। অন্তঃত  মানুষ জানুক-- এটাই কাম্য

বৈশ্য কুলের শ্রেষ্ঠ বনিক জাতি। সেই বনিক সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষরা ধনশালী ও বিত্তবান ছিলেন এবং বনেদিয়ানাও ছিল। কিন্তু এখন তারাই দাম্ভিকতা ও অহংকারী এবং নোংরা পথে" ম" এর মিছিলে বা প্রভাবে অবলুপ্ত প্রায় । এরজন্যও দায়ী বোধকরি সেই অন্ধ সংস্কার। সংস্কার ভালো কুসংস্কার নয়।

নারী হোল মাতৃস্বরূপা এবং শক্তিদায়িনী বলপ্রদায়িনী। তাকে ঘৃণা করে অবজ্ঞা করে কোনো জাতিই বড় হতে পারে না। এখানে ও সংস্কারের নামে কুসংস্কারবদ্ধ মানুষ। অতএব পরিত্যাজ্য।

  মানুষ মারা গেলে হিন্দু ধর্মের দাহ করাটাই রীতি। কিন্তু দাহ করার পর পরই শবযাত্রীদের সকলকে জামা কাপড় কেচে ধুয়ে ( গঙ্গা স্নান করে) তবেই ঘরে প্রবেশের বিধিটা খুবই ন্যক্কারজনক। এতে কোনো বিজ্ঞান নেই। দাহ করার পরে " গোবরের" হাত ধোয়ার এবং নখ পরিষ্কার করা ও ঐ হাতে আগুনের উত্তাপ নেওয়াতে বিজ্ঞান আছে। প্রত্যেকটি জীবানুনাশক প্রক্রিয়া। কথা হোল এটি কী এখন এই যুগে চলে? তখন মানুষ বাড়িতে মারা যেত দীর্ঘ রোগভোগের পরে --ফলে মৃত মানুষের দেহে নানান ব্যাকটেরিয়া জন্মাতো। তাই সেই মৃত দেহটাকে দাহ করে জীবাণু শেষ করেছি কিনা ধন্দে এসব জীবাণু নাশক পদ্ধতির প্রয়োজন ছিল। এখন মানুষ হাসপাতালে নয়তো নার্সিং হোমে মারা যাচ্ছে। এবং দাহ করছে শ্মশানে নিযুক্ত পারদর্শী মানুষেরা।বাকি শবযাত্রীরা দূরে বসে তখন গল্পে নিমজ্জিত/ মশগুল এবং খাওয়া দাওয়ায় সময় কাটায়। ফলে  আগের প্রয়োজন টা এখন অমূলক এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন নয় কি?? গোবরের পরিবর্তে ডেটল ব্যবহৃত হয়। কিন্তু স্নান না করলে ভুতে ধরবে-- এটা কোন্ ধরনের মানসিকতামুসলমান সমাজে কবর দেওয়া রীতি। কৈ সেখানে তো এরকম বাধ্যবাধকতা নেই। এ- ও সেই হিন্দু উচ্চবর্ণের ( ব্রাহ্মণ সৃষ্ট ) সমাজের একরকম অনাচার। আমি এর তীব্র বিরোধিতা করছি। এর প্রতিকার ও উচ্ছেদ চাই। সংস্কার হোক সভ্য হোক। কুসংস্কার মুক্ত হয়ে সমাজে সকলেই মানুষের মত বিচরণ করুক-- এটাই চাই

মৃতদেহ শ্মশান উদ্দেশ্যে নিয়ে যাবার সময় গোবর ছড়া দেবার রীতি তো জীবাণু নাশক প্রক্রিয়ার অঙ্গ। এখন কি এর প্রয়োজন আছে? তাহলে হাসপাতালে বা নার্সিং হোমে কতজনের মৃত্যু ঘটে- সেখানে গোবর ছড়া দেয়া হয় কি? অতএব কুসংস্কার ত্যাগ করে আসুন ঘুরে দাঁড়াই। অসংখ্য কাজ বাকি আছে সেদিকে নজর দিই।

গঙ্গা পবিত্র ও কলুষনাশিনী। সেই গঙ্গা স্নানে ধৌত হয়ে পাপমুক্তি হবে-- আমাদের বিশ্বাস। কিন্তু সেই গঙ্গাই তো এখন বর্জ্য পদার্থ বহন করে দূষণে পরিপূর্ণ। অতএব......

    মেয়েদের শাস্ত্রপাঠ নাকি গর্হিত কর্ম। তাই নিষিদ্ধ। আমার প্রশ্ন-- গার্গী মৈত্রী, ক্ষণা প্রভৃতি অতীত লব্ধপ্রতিষ্ঠ ব্যক্তিরা কি নারী ছিলেন না ?

 শূদ্র দের ওংকার উচ্চারণ নিষিদ্ধ। প্রশ্ন হোল কেনঅ- উ- ম তিনটির সম্মিলিত উচ্চারণেই ওংকারধ্বনি। অথচ শূদ্রদের  অ শাস্ত্রীয় কেন ? এটা কি মেনে নেওয়া যায় ?প্রাণায়াম করা ব্যক্তি মাত্রই ঐ ধ্বনি উচ্চারণের অধিকারী। আজকের ব্রাহ্মণেরা কি প্রতিদিন নিয়ম করে প্রাণায়াম করেন তাহলে তাঁরাও ঐ শব্দ উচ্চারণের জন্য উপযুক্ত নন।শূদ্রেরা করলেই দোষ ও পাপ? ভেবে দেখতে হবে। এ কেমন বিচার-- হে বিধাতা?

অনেক বিবর্তিত হয়েই মানুষ সভ্য হয়েছে।নারী জাতি শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা অর্জন করেছে।বিমান সেবিকা, বিমান চালিকা, প্রধানমন্ত্রী, মূখ্যমন্ত্রী , রাজ্যপাল হচ্ছেনগাড়ি চালাচ্ছেন।কিন্তু অতীতে মেয়েদের স্কুলে যেতে দেয়া নিষিদ্ধ ছিল।এখন মেয়েরাও শিক্ষিতা হচ্ছে।প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিক্ষায় আশানুরূপ ফল করছে।সমাজ সংসার এগিয়ে চলেছে। কুসংস্কার ঘুচে গেছে।নারী শরীরের তেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে-শুভ লক্ষণ। সংস্কার হয়েছেআরও হোক। শাস্ত্রবাক্য মেনে মানুষ তথা সমাজ সুস্থ সবল হোক্-এটাই কাম্য।

 "উপবাস" একটা শাস্ত্রীয় বিধি এবং বিজ্ঞানও সমর্থন করে। অর্থাৎ স্বাস্থ্যের জন্যেই যে শাস্ত্র তার প্রমান।কিন্তু সেই উপবাস নিয়ে কতই না উপহাস, ছলা কলা। প্রোটিন যুক্ত খাবার বা আমিষ খাবার একেবারেই এসময় চলে না। অর্থাৎ শরীরকে সুস্থ রাখার প্রক্রিয়া। সেক্ষেত্রে নানাবিধ অনর্থক নিয়মবিধি মোটেও সুখকর নয়।পরিবর্তনই সংসার ও সমাজের ধারক ও বাহক।পরিবর্তনই স্বাভাবিক।তাই বলে পরিবর্তনের নামে অন্ধত্ব মেনে নেয়া যাবে না।একাদশী অমাবস্যা পূর্ণিমা ছাড়াও জন্মাষ্টমী দূর্গাষ্টমী প্রভৃতিতে উপবাস বিধি প্রচলিত।শিবরাত্রি উপলক্ষ্যেও উপবাসের প্রথা আছে।কিন্তু সেই উপবাসে কী কী খাদ্য আদৌ গ্রহণীয় নয় এবং নিরম্বূ উপবাস কিনা তা নিয়েও নানা মুনির নানা মত।তবু হাল্কা খাবার এবং পাণীয় জলটুকুই শাস্ত্রীয়, বাকিটুকু অহংবোধে পরিপূর্ণ, পাকস্থলীকে বিশ্রাম দেবার নামে শরীরের ক্ষতি করা।সেটাই আমার মতে অ শাস্ত্রীয় এবং কুসংস্কার।অতএব হে মানবকূল,একটু ভেবে সাবধানে পা ফেলূন।নির্দেশ নয়, অনুরোধ।ভুল করেও অন্ধ কুসংস্কারে আবদ্ধ হবেন না।

পুজোয় উপাচারের ছড়াছড়ি-উপাসনা নেইএ - ও একপ্রকার চিরন্তন সত্য। ব্রাহ্মণ আসবে, প্রতিমা জ্বলজ্বল করবে রূপোলী বাঁধুনিতে, প্যান্ডেল সুসজ্জিত হবে, ভীড় জমবে-আরাধনা থাক বা না থাক। সেই উপলক্ষে একটা গান মনে এলো-

 খড়ের প্রতিমা পূজিস রে তোরা/ মাকে তো তোরা পূজিস নে/ প্রতিমা র মাঝে প্রতি মা বিরাজে/ হায়রে অন্ধ বুঝিস নে/ মাকে তো তোরা পূজিস নে।।

 কালী দুর্গা সরস্বতী যে দেবীই হোক না কেন শুধুই সংস্কারে আবর্তিত। সাধনা নেই- নেই ভক্তিও। শুধুই উপাচার্ আর কুসংস্কারের বেড়া জাল। ব্রাহ্মণের উদরপূর্তির নতুন নতুন ফরমান।শিব শনি বা অন্য যেকোনো দেবতার পুজোতেও একিই পরিনতি।এখন আবার বাংলায় গণেশ পূজার চল এসেছে।দেখা যাচ্ছে যারা বইয়ের ধার ধারে না তারা যেমন সরস্বতী বন্দনায় মাতে তেমনি যাদের ব্যবসাই নেই তারা গণেশ পুজোর লেঠেল বাহিনীর সাজে সুসজ্জিত। অন্ধ সংস্কার- কুসংস্কারের বার্তা বহন করছে।

 মা বাবা জ্ঞানে  বা দেবতা জ্ঞানে পুজো তো নয়-শুধুই মাতামাতি হৈ হুল্লোড় আর দৈত্য সমান বক্সের উচ্চ আওয়াজ সম্বলিত বাঁদরামি। হরিকীর্তন বা হরিবাসরই বা বাদ যাবে কেন? সারাদিন রাত যে চিল চিৎকার করা হয় তাতে সমাজের আদৌও কোনো মঙ্গল হয়  কিনা সুহৃদ বন্ধুরা একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখবেন আশা করি। নিমাইয়ের প্রেম নিবেদনে যে ভক্তিরসের জোয়ার এসেছিল সেটা আদৌ হরিবাসরে পাওয়া যায় কি? ভাবুন- ভাবুন- আরো ভাবুন।গর্ভধারিনী মাকে পদাঘাত করে প্রতিমাতে মাকে প্রতিষ্ঠা করা ধৃষ্টামি ছাড়া কিছু নয় বলেই মনে হয়। এবং এটাও কুসংস্কারের বশে বশীভূত। তাই নয় কি !!?

 বর্তমান শতকে আধুনিকতার ছাঁচে অনেক পুরুষই এখন বিনম্র না হয়ে উগ্র মানসিকতায় ' বিকট দানবীয় ' মেসিনের মতো বারেবারে থেঁতো করে দিচ্ছে হৃদয়ের আহ্বান। পিষে দিচ্ছে সৎ প্রবনতা এবং সর্বস্ব সমর্পণ করতে না পারার পছন্দের ভালবাসা টুকু।এটা অবশ্য সংস্কার না কুসংস্কারের পথে বিবর্তন বলতে পারবো না।

 বরং বলতে পারি ঃ

আর কি বলার আছে ? ঈশ্বর এটাই তো প্রাপ্তি। এটাই নির্ভুল ধ্বংসের দীপ্ত মহিমা।

  মৃতদেহের মাথার কাছে তুলসী গাছ দেবার রেওয়াজ সুবিদিত। কিন্তু কেন? তুলসী গাছের মধ্যে প্রচুর অক্সিজেন আছে যেটা অশ্বত্থ গাছে র মধ্যে থাকলেও বড় ভারীঅতীতে যখন বিজ্ঞান এত উন্নতি করতে পারেনি, ডাক্তারি পরিষেবা উন্নত ছিল না তখন সমাজে মানুষের মনে তুলসীর তলায় শুইয়ে মৃত মানুষের জন্য প্রাণ ফিরে পাবার আশা করতো। যদি মানুষের হঠাৎ শ্বাস যন্ত্রটি চালু হয়ে যায় এই আশায়। ঠাকূর বাঁচিয়ে দেবে। না। সেটা হাল্কা অক্সিজেন সরবরাহ করে যদি মানুষের প্রাণ ফিরে আসেএখন তো ডাক্তার কমপক্ষে ৩/৪ ঘণ্টা না কাটলে মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেন না। তারপরেও বাড়িতে এনে তুলসী ডাল মাথার কাছে রাখাটা স্রেফ সংস্কার ( কুসংস্কার) ছাড়া আর কিছুই নয়। অতএব যেটা করা হয় সেটা শুধুই ঝোঁক মেটানো নয় কি ? সময়ের অপচয়ও বলা যেতে পারে। অতএব অবস্থান বদলানো যেতেই পারে।

 রচনাঃ ৩০ ভাদ্র ১৪২৫



লেখা পাঠানোর নিয়মাবলী

আপনারা আপনাদের মূল্যবান লেখা নির্দ্বিধায় আমাদের কাছে পাঠাতে পারেন। আমরা তা আমাদের অনলাইন ম্যাগাজিনে প্রকাশ করব।

ইমেল আইডি: contact.okopotanusandhan@gmail.com

লেখার ফরম্যাট: অভ্র ইউনিফাইড টাইপ কিপ্যাডে টাইপ করে লেখা পাঠাতে হবে।

ইমেলে যা উল্লেখ করবেন: আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং কোন ক্যাটাগরিতে লিখছেন তা উল্লেখ করতে ভুলবেন না।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top