রাখী বন্ধন-প্রসাদ হালদার || ছোটোগল্প || অকপট অনুসন্ধান

0
রাখী বন্ধন-প্রসাদ হালদার 

শ্রাবণ মাসের রাখী পূর্ণিমার রাত, পুলোক বাড়ির ছাদে বসে চক চকে চাঁদের দিকে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে আছে। এক বছর আগের চাঁদটাও এরকমই উজ্জ্বল ও আলোকিত ছিল, কিন্তু তাঁর জীবনের সেই অধ্যায়টা ছিল অন্ধকার। স্মৃতি মন্থন করতে গিয়ে পুলোকের চোখে ভেঁসে উঠলো রাখী বন্ধনের দিনটির কথা । সেদিন পুলোকের কোমল হৃদয়টি প্রতি পদক্ষেপে ক্ষত বিক্ষত হয়েছিল । পুলোকের নিজের বোন বা দিদি ছিল না , তাই রাখী বন্ধন ও ভাই ফোঁটার দিন পুলোক প্রতিবার মামার বাড়ি যেত। তাঁর চার মামার মোট সাতটি মেয়ে , পুলোক বয়সে তাদের চার জনের ছোট ও দুই জনের বড়ো ছিল। মামার বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী ভাই ফোঁটা ও রাখী পূর্ণিমাতে সব ভাইদের একত্রিত বসিয়ে ফোঁটা ও রাখী পরিয়ে আশীর্বাদ করা হতো।পুলোকের মামার ছেলেদের সাথে মাসির ছেলেরা ও সেদিন উপস্থিত থাকতো। পুলোকের মামার ও মাসির বাড়ির আর্থিক অবস্থা পুলোকদের আর্থিক অবস্থার তুলনায় অনেক গুণ ভালো।তাই পুলোক মামা ও মাসির ছেলে , মেয়েদের কাছে অবহেলার পাত্র ছিল । রাখী পূর্ণিমাতে সব ভাইদের বোনেরা একত্রিত বসাতো তার পর একে একে সব বোনেরা ফুল ছিটিয়ে, প্রদীপ দেখিয়ে ভাইয়ের দীর্ঘায়ুর জন্য রাখী বেঁধে দিত । রাখীর সুন্দর্য নির্ভর করতো ভাইদের আর্থিক অবস্থা ও উপহারের উপর। সবার হাতে চক মকে পাথর বসানো রাখী একে একে পরিয়ে দিলো সাত বোন, কিন্তু পুলোকের হাতে জুটলো স্বল্প মূল্যের তুলো ও কাগজের রাখী। মিষ্টান্ন ও খাবার পরিবেশনেও যে বৈষম্য ছিল সেটা না বলাই শ্রেয়। ঠিক একই ভাবে পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল ভাই ফোঁটাতেও ।

ফোঁটা দেওয়ার পূর্বে ভাইদের হাতে একটি করে কলা দেয়ার নিয়ম ছিল, সব ভাইদের হাতে কলা দেয়ার পরে পুলোকের হাতে এসে পড়লো অর্ধগলিত একটি পঁচা কলা।ফোঁটা ও আশীর্বাদের শেষে পুলোক দেখতে পেলো সব ভাইদের মাথার উপর সুগন্ধী ফুলের ঘনঘটা,সে নিজের মাথায় হাত দিয়ে দেখলো তাঁর কপালে কয়েকটা ধান আর দূর্বা ছাড়া কিছু জোটেনি।এমন সময় পুলোকের স্মৃতি মন্থনে বিঘ্ন ঘটিয়ে মা উপস্থিত হলো, মা জানালো মামার বাড়ি থেকে খবর দিয়েছে কাল রাখী পূর্ণিমা সবাইকে যেতে হবে । তাই ব্যাগ পত্র গুছিয়ে রাখতে বলে মা চলে গেলো।পরদিন পুলোক বিগত বছরে মতোই রাখী বন্ধনে মামার বাড়ি গেলো। কিন্তু এবার সে বেকার বা দরিদ্র নেই সরকারী হাই স্কুলের শিক্ষক বেতন ও প্রাইভেট মিলিয়ে তাঁর মাসিক আয় এক লাখের কম নয়। সেই ভাই বোন সকলেই একই আছে পুলোক শুধু পরিবর্তন দেখছে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির , আজকে তাঁর প্রতি সমাদর ও কম নয়। বোন ও দিদিরা দামি চকচকে পাথর বসানো রাখী বাঁধছে, সব থেকে সুস্বাদু মিষ্টি গুলোও তারই থালায়,আর ফুলের বাহার নাইবা বলি। পুলোক নির্বাক হয়ে রইলো সেদিন অপমান,অপদস্ত হয়েও কোনো প্রতিবাদ করেনি, আজ তাদের ভালোবাসার বাড়া-বাড়িতেও প্রতিবাদ করতে পারল না । তাঁর মনে শুধু একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল অর্থ,সম্পদই কি এখন ভালোবাসা ও সম্পর্ক নির্ধারণের চাবিকাঠি?


লেখা পাঠানোর নিয়মাবলী

আপনারা আপনাদের মূল্যবান লেখা নির্দ্বিধায় আমাদের কাছে পাঠাতে পারেন। আমরা তা আমাদের অনলাইন ম্যাগাজিনে প্রকাশ করব।

ইমেল আইডি: contact.okopotanusandhan@gmail.com

লেখার ফরম্যাট: অভ্র ইউনিফাইড টাইপ কিপ্যাডে টাইপ করে লেখা পাঠাতে হবে।

ইমেলে যা উল্লেখ করবেন: আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং কোন ক্যাটাগরিতে লিখছেন তা উল্লেখ করতে ভুলবেন না।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top