রবীন্দ্রনাথ ও নারীবাদ-সত্যেন্দ্রনাথ পাইন || নিবন্ধ || অকপট অনুসন্ধান

0


১৯১৪ সালের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা আটটি ছোটো গল্প উপহার পেলাম-- যেগুলো স্বাদে ও রূপে আলাদা আলাদা।১৮৮৪ত কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করলেন।তাঁর চরিত্র হলো " তুলসী গন্ধ"! মৃণালিনী ( মানে আসল নাম যাঁর ভগবতী) মারা গেলেন ১৯০২ সালে, আর রেণুকা তথা রানী মারা গেলেন ১৯০৩ এ, ১৯০৬য়ে মারা গেলেন কবিপুত্র শমীক। এ সবগুলোই তাঁর ক্রম বিন্যস্ত পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের অহেতুক অত্যাচার, যৌতুকের অত্যাচার, স্বতন্ত্র নারী দের সমস্যা, মুক্তি পিয়াসী নারীদের প্রতিবাদ সবই ঘুরে ঘুরে ফিরেছে তাঁরই সৃষ্ট নানান ছোটো গল্পের ছোট্ট পরিসরে।'হালদার গোষ্ঠী' গল্পে রবীন্দ্রনাথ বুঝিয়েছেন " নারী পুরুষের" " বিবাহ সম্পর্কিত মিলন হোলো পিতৃতন্ত্রের হস্তক্ষেপ-- যা স্বামীকে বলতে বাধ্য করে যে স্ত্রী তার'" সম্পত্তি নয়, সে আমার সম্পদ'"!  অথচ এই সহৃদয় স্বামীর খেদোক্তিতে পাই" আমাকে তো কিছুই ছাড়িতে হয় নাই।না আত্মীয়, না অভ্যাস, না অন্য কিছু। হৈমন্তী যে সমস্ত ফেলিয়া আমার কাছে আসিয়াছে সেটা কখনই তাহা আমি ভালো করিয়া ভাবি নাই ।" এখানে এই পিতৃতন্ত্রের কারবারে ব্যাক্তির  ওঠাবসা নেই"! এটা loss of agency " র গল্প।   "হৈমন্তী যে অন্তরে মুহুর্তে মুহুর্তে মরিতেছিল তাহাকে  আমি সব দিতে পারি কিন্তু মুক্তি দিতে পারি না,-তাহা আমার নিজের মধ্যে কোথায়? " 'বোষ্টমী', "স্ত্রীর পত্র", পয়লা নম্বর"-সবখানেই নারীদের জন্য  উৎকন্ঠা রবীন্দ্রনাথ কে পীড়া দিয়েছে। আর সেটাই যেন নারীসত্তার "typecasting" হয়েছে।  "পুরাণের বাসুকি যে পৌরাণিক পৃথিবী কে ধরে আছে সে পৃথিবী নিষ্ঠুর। কিন্তু, সংসারে যে মেয়েকে বেদনার পৃথিবী বহন করতে হয় তার সে পৃথিবী মুহুর্তে মুহুর্তে নতুনন নতুন আঘাতে তৈরি হয়ে উঠছে।

সেই চলতি ব্যাথার ভার বুকে নিয়ে যাকে ঘর কন্যার খুঁটিনাটির মধ্যে দিয়ে প্রতিদিন চলতে হয়, তার অন্তরের কথা অন্তর্যামী ছাড়া কে বুঝবে"? এখানেও রবীন্দ্রনাথ!  নাকি " Feminine mystique " এর আগাম ইশারা??!!  আবার বললেন, "অনাবশ্যক আবর্জনা ঘরের আশেপাশে অনায়াসে স্থান পায়। কিন্তু অনাবশ্যক মেয়ে মানুষ যে একে অনাবশ্যক আবার তার উপরে তাকে ভোলাও শক্ত। সেই জন্য আস্তাকুঁড়েও তার স্থান নেই"-এটাও ক্ষীণালোকিত অন্তঃপুরের নারীর স্থান বিচারে তাঁর মূল্যায়ন বিবর্ণ পুরুষতন্ত্রের প্রতি ন্যাক্কারজনক ধিক্কার ছাড়া আর কিছু নয় কি!?  বিন্দুকে তার উন্মাদ অত্যাচারী স্বামীর ঘর করতেই হবে, নিজের শ্বশুর বাড়ির এই জেদের বিরুদ্ধে মৃণাল যে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে মাথা উঁচিয়ে প্রতি বাদ করেছে তা গবেষণার বিষয়-অন্ততঃ " নাটকের তামাশাটা কেবল বাঙালি মেয়েদের শাড়ির ওপর হয় কেন, আর বাঙালি বীরপুরুষ দের কোঁচার উপর দিয়ে হয় না কেন, সেটাও ভেবে দেখা উচিত "! এ নালিশ পিতৃতন্ত্রের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণাই উদ্রেক করে।  মৃণালের এ হেন আর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আশাপূর্ণা দেবী সহ বাঙালি নারীবাদী লেখিকাদের উপন্যাসে বেশ কয়েক বছর ব্যাপী এই রাবীন্দ্রিক রাস্তা ধরেই।  আবার, " নারী বলেই দিচ্ছি। ভালোবাসার আদর্শ আমাদের পুজোর জিনিস। তাকেই বলে সতীত্ব। সতীত্ব একটা আদর্শ।.... তাকে রক্ষা করতে না পারলে আমার শুচিতা থাকে না। "-- এটাই রবীন্দ্রনাথের কাছে নারী সম্পর্কীয় ভারতীয়  ভাবধারার প্রভাব।   যদিও কারো কারো মতে-- রবীন্দ্রনাথ নারী বাদী নন, তিনি " Proto feminist"! হৈমন্তী, বোষ্টমী', স্ত্রীর পত্র প্রভৃতি তে রবীন্দ্রনাথ আসলে " ল্যাবরেটরী "তে অন্য রবীন্দ্রনাথ। যেন পিতৃতন্ত্রের নতুন সেবক।   তাহলে রবীন্দ্রনাথ ভারতবর্ষের নারী কূলের সমস্যা তুলে ধরতে চেয়ে আসলে " রেমন্ড উইলিয়ামসের মতে " Indicative" না Subjective  -প্রশ্ন থেকেই যায়।  
সূত্র: রবীন্দ্রচর্চার ২য় পর্ব। 



লেখা পাঠানোর নিয়মাবলী

আপনারা আপনাদের মূল্যবান লেখা নির্দ্বিধায় আমাদের কাছে পাঠাতে পারেন। আমরা তা আমাদের অনলাইন ম্যাগাজিনে প্রকাশ করব।

ইমেল আইডি: contact.okopotanusandhan@gmail.com

লেখার ফরম্যাট: অভ্র ইউনিফাইড টাইপ কিপ্যাডে টাইপ করে লেখা পাঠাতে হবে।

ইমেলে যা উল্লেখ করবেন: আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং কোন ক্যাটাগরিতে লিখছেন তা উল্লেখ করতে ভুলবেন না।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top