পিরামিড স্মৃতি মন্দির-শ্রীমতি পম্পা বাকুলি
দিন শেষ যায়
নব প্রভাতের কূলে
সাঁঝের শেষ খেয়া।
আজ হয়েছে যে
স্বাধীন,
অহম্ বন্ধন হতে
মুক্তি দিয়েছে কে
সমাধিতলে আনি।
সেই প্রবোষ্ণ
মখমলিয়া মণিজরিন সাজ,
নেই সেই
প্রপঞ্চ জাল ফেলেছে ছিঁড়ে ;
মেঘ শোভিত কিরীটে
ভূষণ
মণ্ডিত কনক শিখরে।
শতবর্ষর ব্যথার
কপোল
যে প্রত্যাশায়
বিনিন্দ্র-
তাই এল করিয়া বহন
মরুও অলিন্দে ;
একটি দীপ জ্বলে
যায় দূর তারার পানে।
ঘুমপাড়ানি ঘুমে
নিত্যশিশু
নিত্যদোলায় দোলে,
হঠাৎ জাগবে
কাঁদিয়া।
তৃষিত বক্ষে
বাজবে সেতার
রাগ-বেহাগে
বিচ্ছেদের বেদনাভরে।
জমাটি চাদর
নিয়েছে টানিয়া
তন্দ্রাহারা
কঠিন বসনে,
হিমের হাওয়ায়
উড়ছে উড়ানি ধূম্রবর্ণে ;
হেমন্তের অস্তাচলে
পাংগু বদন শূন্যক্ষণে,
দরদী বসে জলতরঙ্গে
কত কথাকাহিনীতে
আকাশের পানে চেয়ে,
আজও
নির্বাক-পিরামিড।
তাই আজ ভাবুক
হাওয়ায় ওর নিশান,
অবিচল স্মৃতি
উত্তর হাওয়ায় হাওয়ায় ;
কতবর্ষ- কতরাত্রি-
ধরে জাগিয়া জাগিয়া
রয়েছে গভীরে
নির্জন মরুরো পাথারে।
পাথরের ঘরে
স্তব্ধতা কাঁপায় ঘুমননিঃঝুম
আবেশ কি এল
ঐন্দ্রজালিক ?
নইলে লিনেন
আচ্ছাদন হবেনা উন্মোচন,
প্রায়শ কি জানায়
সেকথা নির্বোধ কেও ?
দুহাতে চারুরো
চাদর নিয়েছে টেনে,
বহুকাল- ধরে
ডেকেছে ওর রুদ্ধ কপাট ;
কুহেলিকায় ঢেকেছে
ইন্দ্রজাল রচিয়ে,
সময়ের চাকা
থমকে দাঁড়ায় এখানে।
ওই সোনা মুখো কঠোর
ঐ বালুসাগরে,
তপ্ত ভূমেতে
উত্তপ্ত রক্তের স্রোত ;
যত তির্যক শিখর
করিছেতে বিবাদ-
কত না জানি বলে
কথা।
'লু হাওয়ায়'
উড়ছে ওর কেশবেশ,
দোলে সবুজ ঘাস
শ্বেত নীল জলরো পারে
জটিলে লতারো কাঁদে
রজনের রসেতে।
মরণও ধমনীর
নিভন্ত বন্ধুত্ব ;
চাঁদের আলোয়
অবাক- মৃত্যুঘুমপ্রাসাদ,
রূপাঝরা নিশিথে
জোছনেতৃষা জাগে ;
পেটফুলে খেয়ারা
নিঃসঙ্গ নিষিদ্ধ রাতে,
নিঃশব্দে প্রেতেরা
গেড়েছে নিভৃতে ছাউনি।
সেই সুখের
দিন মখমলিয়া বেশ
নেই সুখতারা
আলোকিত ছিল যারা।
নিস্পন্দ ধূম্র
কায়া পাণ্ডুর বর্ণে তাকায়,
শ্মশানপুরীতে ঘুম
ভাঙে ঘুম ঘোরে।
আধখানা চাঁদ
আঁধারের হাতে,
পীড়িত নিঃশ্বাস
ব্যথার ভিজে বালি ;
মুকতি বন্দীরা
কাঁদে অশ্রুত ক্রন্দনে,
যুগ-যুগান্তরে
বহ্নিস্নান আগামীর না শোনা ক্ষোভ।
মৃগতৃষিকা
অকূল সোনালী সাগরে,
মর্মভেদী দিঠি
হৃদয়তলে- , মৃত্যুর ঘুমের জায়গা ;
ভাবুকের আজ
দুর্ভেদ্য মত-
বালুকাভূমি নয়
পিরামিড।
জলপটে আঁকে পদ্মের
আলপনা জল,
সবুজের বনে আলাপে
জীবনের তান ;
অনেক বিপন্ন প্রাণ
বিষন্ন শেষ সন্ধ্যায়,
দুঃসহ জ্বালায়
ধোঁয়ার ধোঁয়ায় জ্বলে।
আজও
বিক্ষুব্ধ প্রেতের মতো দাঁড়িয়ে,
সহস্র বছর ধরে ওর
রক্তের দাগ এঁকে ;
কত সন্ধানী
মায়াতোরণে আসেনি
বাস্প মাখা চোখ
সুরের মালা লয়ে।
অচল স্মৃতিমন্দির
ভস্ম মেখে গায়ে,
আর কতকাল বল
রইবে নীহার কুণ্ডে ;
এসো এসো উঠে সুপ্তির জাল ছিঁড়ে
নিবিড় বেদনায় মোমের বাতি হাতে।
লেখিকাঃ শ্রীমতি পম্পা বাকুলি, হুগলী, চন্দননগর
লেখা পাঠানোর নিয়মাবলী
আপনারা আপনাদের মূল্যবান লেখা নির্দ্বিধায় আমাদের কাছে পাঠাতে পারেন। আমরা তা আমাদের অনলাইন ম্যাগাজিনে প্রকাশ করব।
ইমেল আইডি: contact.okopotanusandhan@gmail.com
লেখার ফরম্যাট: অভ্র ইউনিফাইড টাইপ কিপ্যাডে টাইপ করে লেখা পাঠাতে হবে।
ইমেলে যা উল্লেখ করবেন: আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং কোন ক্যাটাগরিতে লিখছেন তা উল্লেখ করতে ভুলবেন না।

