মানসিক অত্যাচার-সঞ্চিতা ঘোষ || ছোটগল্প || অকপট অনুসন্ধান

0


শান্তিপুরের এক মস্তো বড় বাড়ি "আনন্দ নিড়।" রাম বাবুর মা-বাবার মৃত্যুর পর সেই বড় বাড়িতে রাম বাবু আর তার স্ত্রী মাধবী এই দুজনেই এই বড় বাড়িতে থাকতেন।বিবাহের দু'বছর যেতে যেতেই মাধবীর কোল আলো করে এলো একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান। এই বাড়ি যেন আজ প্রাণ ফিরে পেলনএই ছোটো মেয়েকে দেখে রাম বাবু আর মাধবী খুব খুশি। তাই আনন্দেই এই মেয়ের নাম রেখে দিলেন মিষ্টি। সত্যিই মেয়েটির যেমন সুন্দর মুখ আর তেমন সুন্দর নাম মিষ্টি। নামটা যেন তার জন্যই তৈরি হয়েছিল।সময় বয়ে গেল। মিষ্টিও দশ বছরে পড়ে গেল।ছোটবেলা থেকেই মিষ্টির সময় কাটাতে থাকে তার মায়ের সাথেই।তাদের আসে-পাশে ছোট বলতে তেমন কেউ ছিলনা তাই সে সবসময় মায়ের সাথে থেকেই সময় কাটাতো।বিভিন্ন ধরনের গল্প সে মায়ের কাছে শুনতো।আর তার মা তাকে এই গল্প বলার মধ্যে দিয়ে বোঝাতো যে তুমি এখন বড় হয়েছো মিষ্টি। তুমি খুব ভালো মেয়ে তাই সবাই তোমাকে আদর  করবে, কিন্তু এমন কেউ যদি কখনো তোমাকে আদর করতে করতে তোমার শরীরে কোথাও হাত দিতেও পারে। তখন তুমি জোরে জোরে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দেবে। আর আমাকে বা বাবাকে আর যাকে সামনে পাবে সব কথা তাকে বলে দেবে।কেউ যদি তোমাকে চকলেট দেয় তোমাকে ভালো ভালো কথা বলে তুমি তাহলেও আমাকে বলবে। রামবাবু রোজ মিষ্টিকে স্কুলে দিয়ে আসেন আবার স্কুল ছুটি হলে নিয়ে আসেন। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন রামবাবু খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। মিষ্টির ও স্কুলে যাওয়া আসার অসুবিধা হয়ে গেল।তখন স্কুলে দিয়ে আসা নিয়ে আসার জন্য মাষ্টির মা ড্রাইভার খুঁজতে শুরু করে। পাশেই বিদ্যুৎ নামের ছেলেটিকে ড্রাইভার হিসেবে পেয়ে যায়।বিদ্যুৎ মিষ্টিকে স্কুলে দিয়ে আসা নিয়ে আসা করতে থাকে। সে মিষ্টিকে মাঝে মাঝে চকলেটও কিনে দেয়।আর মিষ্টিও তার মাকে বলে যে- মা  জানো বিদ্যুৎ আঙ্কেল খুব ভালো, আমাকে চকলেট কিনে দেয়। এ সমস্ত কিছুই তার মা-বাবার খুশি হয় যে ছেলেটি সত্যিই খুব ভালো। হঠাৎ করে রাম বাবুর শরীর যেন একটু বেশি খারাপ খারাপ হলো। আর দেরি না করে রামবাবুকে নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হল।  সেদিন ছিল বুধবার রোজকার মত মিষ্টি রেডি হয়ে স্কুলে যাবে, তার সাথে তার মা  মাধবীও নার্সিংহোমে যাবার জন্য বেড়িয়ে পড়লেন। মিষ্টির  ব্যাগে তার মা বাড়ির একটি চাবিও দিয়ে দিলেন। মিষ্টিকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে বিদ্যুৎ মাধবীকে নার্সিংহোমে নামিয়ে দিলো। আবার পুনরায় স্কুলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরল, মিষ্টির স্কুল ছুটি হয়ে গেল। বিদ্যুৎ মিষ্টিকে নিয়ে বাড়ি চলে এলো।বাড়িতে কেউ ছিল না। মিষ্টি নিজে নিজেই খেয়ে দেয়ে ঘরে গিয়ে টিভি দেখছিলো। বিদ্যুৎ বাড়ির সামনেই গাড়িতে বসে ছিল। সে মাধবী দেবীর ফোনের অপেক্ষায় ছিলো। কিছু সময় যেতেই মাধবী দেবীর ফোন এলো কিন্তু বিদ্যুৎ কে বললো আরো দু ঘন্টা পরে আসতে। হঠাৎ করেই বিদ্যুতের মাথায় যেন এক অসুরের মতো মানসিকতা জাগলো।সে দুটো চকলেট কিনে নিয়ে মিষ্টির ঘরে গেল। মিষ্টিকে সে চকলেট খেতে দিলো মিষ্টি  খুব আনন্দে চকলেট খেতে শুরু করল। হঠাৎ করে বিদ্যুৎ মিষ্টির গায়ে হাত দিতে শুরু করে মিষ্টি বলে উঠলো বিদ্যুৎ আঙ্কেল আমাকে ধরবে না আমার ভালোলাগে না।এই কথা শুনে বিদ্যুৎ মিষ্টির গায়ে আরো বেশি করে হাত দিতে থাকলো।বিদ্যুৎ এই আচরন মিষ্টির পছন্দ হচ্ছিলো না। আর তার মা তাকে বলেছিল যে তোমার যদি  অন্য কেউ আদর করে আর তোমারা যদি ভালো না লাগে তাহলে  তুমি  চিৎকার দেবে তাই সে  বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিতে শুরু করলো।সেদিন যেন বিদ্যুৎ এক  অন্যরকম পশুর মতো ব্যবহার করছিলো।কিছুতেই সে মানছিলো না।মিষ্টি কোনোরকমে ছুটে পালিয়ে খাটের নীচে গিয়ে লুকিয়ে পরল।আর বিদ্যুৎ তাকে খুঁজে পাচ্ছিল না বলে হঠাৎ করে এসে নাটক মেরে বলে উঠলো ও কাকিমা তুমি চলে এসেছো। এই শুনে মিষ্টি ভাবলো যে তার মা হয়তো চলে এসেছে সে খাটের নীচ থেকে বেড়িয়ে এসে মা-মা করে চিৎকার দিল। আবার বিদ্যুৎ তাকে চেপে ধরল  কোনরকমে বিদ্যুতের হাতের  হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে মিষ্টি সিঁড়ি থেকে পড়ে গেল। আবার পুনরায় বিদ্যুৎ তাকে ধরতে গেলো এবার মিষ্টিও বিদ্যুৎ এর হাতে কামড় মেরে এক দৌড়ে গেটের বাইরে বেরিয়ে রীতা পিসি রীতা পিসি বলতে বলতে পাশের বাড়িতে দৌড়ে চলে গেল। বিদ্যুৎ হতভম্ব হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল।মিষ্টি রীতাকে সব ঘটনা বলল।মধবী দেবীকে রীতা সব ঘটনা বললো।সমস্ত কিছু শুনে মাধবী বিদ্যুৎ কে পুলিশে দিলো।বিদ্যুৎ এর আজীবন জেল হলো। কিন্তু মিষ্টি যেন হঠাৎ করেই স্তব্দ হয়ে গিয়েছে।এক বছর ধরে সে কোন কথাই বলে না। চুপ করে শুধু ঘরের কোণে বসে থাকে।এইদিকে রামবাবুও ধীরে ধীরে সুস্থ হলেন।জমি বাড়ি বিক্রি করে তারা সপরিবারে কলকাতায় চলে এলেন।এই পরিবর্তনি যেন মিষ্টি মুখের কথা ফুটিয়ে দিল।দেখতে দেখতে মিষ্টির আঠেরো বছর পূর্ণ হল।সে আজ বড় হয়ে গিয়েছে।কিন্তু এখনো প্রতি রাত্রে সে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করে ওঠে।সত্যিই মানুষ কত নিষ্ঠুর আর কত নীচুই বা তার মানসিকতা। এখনো আমাদের সমাজে কেউ কেউ আছে যারা ছোট বাচ্চাকেও অসভ্য চোখে দেখে নোংরা মানসিকতা নিয়ে। (সমাপ্ত)


লেখা পাঠানোর নিয়মাবলী

আপনারা আপনাদের মূল্যবান লেখা নির্দ্বিধায় আমাদের কাছে পাঠাতে পারেন। আমরা তা আমাদের অনলাইন ম্যাগাজিনে প্রকাশ করব।

ইমেল আইডি: contact.okopotanusandhan@gmail.com

লেখার ফরম্যাট: অভ্র ইউনিফাইড টাইপ কিপ্যাডে টাইপ করে লেখা পাঠাতে হবে।

ইমেলে যা উল্লেখ করবেন: আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং কোন ক্যাটাগরিতে লিখছেন তা উল্লেখ করতে ভুলবেন না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top