ঠিকানা ঈশ্বর–ভবঘুরে || ছোটোগল্প || অকপট অনুসন্ধান

0

 


রফিক জাদুর খেলা দেখায়।মেলাতে, পথে ঘাটে।

হাততালির আওয়াজ অনেক্ষণ বাজে।টাকা পায় খুব কম, গোনার শুরুতেই শেষ হয়ে যায়।উপার্জনের জন্য এ পেশায় আসে নি। এসেছিল প্রানের টানে।কেউ তো আর ভালোবাসলে না !

মুরুব্বিরা বেজায় খাপ্পা।'লোক ঠকায়ে টেকা কামাস!তোওবাতোবা।দোজখে যাবি ব্যাটা।'

নাসির গান করে।মেলা ফাংশানে, চটুল বাণিজ্যে। 
ঘন ঘন সিটি,সেফটিপিনে দশ বিশ টাকা দেয় কেউ কেউ।বুকে ঝুলিয়ে।
কিশোর, রফি, শানু বুকে নিয়ে ঘোরে সে।ভালোবাসার টানে।কেউ তো আর ভালোবাসলে না!মাতবরেরা মুখ বেঁকায়।'গুনা করছস ?জাহান্নমে যাবি ব্যাডা।'

ঝন্টু চরিত্রহীন।রোজ চরিত্র বিক্রি করে। মদে, জুয়ায় আর মেয়ে মানুষে। 
সেই কোনকালে ঘৃণা গুলো বংশ বিস্তার করল বুকের মধ্যে।তাপ্পর ঘৃণা কে বুকে জড়িয়ে পাঁকে ডোবা শুরু।
কেউ তো আর ভালোবাসলে না !
লোকেরা ঘেন্না করে।ওকে দেখে বলে, " মদখোরথু:, মারবো লাত্থি শ্লা।"
মেলায় আগুনটা কীভাবে লাগলো জানা যায় নি।শর্ট সার্কিটনাকি অন্য কিছু ?

সবাই পালাচ্ছিল।আগুনের লেলিহান শিখা, ধোঁয়া, চপ, ফুলুরি, ঘুগনি, কান্না, আর্তনাদ, নারী, পুরুষ, শিশু, চিত্কার, কোলাহল সবকিছু মিলেমিশে মেলার পদপিষ্ট জমিন থেকে কুন্ডুলি পাকিয়ে উঠে আসমানী বাতাসে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছিল।...
আগুন যে আবার আপন পর মানে না ! যে দেয় সেও জ্বলে, যে নেভায় সেও জ্বলে।
তবুও....

মৌলনা সাহেবের একমাত্র কিশোরী মেয়ে, পঞ্চায়েত প্রধানের শিশু পুত্র, সান্যাল মশাইয়ের শ্রদ্ধেয় জননী, সাবির চাচার তিন নম্বর বিবি, আনারুলের একমাত্র বোন  বেঁচে গেল ! আগুনের মাঝখানে থাকা সত্ত্বেও ! আহত না হয়েই !

পুড়ল শুধু তিনটে শরীর।আগুন যখন দাউদাউ করে জ্বলছিল তখন ওই তিনটি শরীর একে অপরকে ডাক দিয়েছিল, " ভাইরে, আয় । বেহেস্তে যাই।একবার অন্তত ভালোবাসা দেকাই।আমাদের তো কেউ বাসলে না।আমরাই নাহয় বাসি। "

রক্তাক্ত হল তিনটে শরীর।পুড়ল।ঝলসে গেল রক্ত, মাংস আর ভালোবাসা।সমাজের অপাঙ্ক্তেয়রা।ঘৃণা সমেত।আগুনের সামনে বুক পেতে সমানে লড়াই করেছিল ওরা।ঝলসানো দেহ নিয়ে বাঁচিয়েছিল ভদ্দরলোকদের আব্রু ইজ্জত।ধুঁকতে ধুঁকতে ।

তিনদিন হাসপাতালে থাকার পর মৃত্যুকে ভালোবাসল ওই শরীর তিনটি।সমর্পিত লাশ হয়ে।সত্যি সত্যি চলে গেল ঈশ্বরের বেহেস্তে। মুরুব্বিদের তৈরি করা দোজখ আর জাহান্নম থেকে চলেই গেলো। 
কারণ! 
কারণ, ঈশ্বরের সেই সময় স্বর্গীয় উদ্যানের দেবালয়ে তিনটি ফুলের ভীষণ দরকার ছিলো।
এভাবেই।...
ঈশ্বরের বাগিচায় তিনটি পারিজাত ফুল অমলিন হয়ে ফুটে রইলো ।

লেখকঃ ভবঘুরে (কলকাতা)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top