কল্পনাতেও সত্য-চন্দ্রসিংহ মন্ডল || গল্প || অকপট অনুসন্ধান

0

 কল্পনাতেও সত্য-চন্দ্রসিংহ মন্ডল

সাধারণ দরিদ্র ঘরে প্রেম-টেম এক বিরাট ব্যাপার।দৈনিক পেটে দানা-পানি কী পরবে – সে চিন্তায় ভোর হয়।তাছাড়া খেত-খামারে অক্লান্ত পরিশ্রমের পর অন্য কিছু নিয়ে ভাবার সময় কোথায়।প্রেম করার ইচ্ছে আর সকলের মত আমারও আছে,কিন্ত সে সাধ কজনের পূরণ হয়।
পল্লীপুরের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা চাষবাস।কেউ কেউ নিজের খেতের কাজের পর অন্যের খেতে জন দেয় দুটো বাড়তি উপার্জনের আশায়।গ্রামে এক থেকে সর্বোচ্চ আট বিঘে মালিকানা কৃষকদের নিয়ে বাস।স্বভাবতই এক দরিদ্র জনবসতি গ্রাম। পল্লীপুরের গাঁও ছুঁয়ে পূর্ব পাশ দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে গেছে মায়ামণি নদী।নদীর উভয় কূল প্রায় আড়াই কিমি ব্যাপী উর্বর পলি দ্বারা বেষ্টিত।ঝিঙে,হলুদ,আলু,পটল,মাসকলাই,বরবটি আরও নানান সবজি চাষের জন্য সুপরিচিত।
প্রতিবেশি গ্রামগুলি একই রকম চাষ নির্ভরশীল।কেবল প্রদীপগঞ্জে দু-একটি চাকুরিজীবি পরিবার ব্যাতীত অন্যরা ছোটোখাটো ব্যবসা করে। সাঁকো পাড়ায় হঠাৎ এক নতুন কিশোরীকে দেখে কুশন চমকে যায়।হলুদ ফর্সা 
মেয়েটির সুন্দরী রূপ যে কারো নজর কাড়বে।কুশন ভাবল জিজ্ঞেস করবে ‘আসল বাড়ি কোথায়?’এখানে কার বাড়িতে এসেছে,কেনই বা এসেছে?ইত্যাদি ইত্যাদি।‘‘এতো সুন্দর রূপসী মেয়ে কুশন যেন এই প্রথম দেখল।‘যাক ভগবান এতোদিনে চোখ তুলে তাকিয়েছে।‘
কুশন নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করেছিল যে মাধ্যমিক পাশের পর প্রেম করবে এবং যাকে ভালোবাসবে তার সাথে সংসার পাতবে।প্রদীপগঞ্জের স্কুলের বন্ধুরা প্রেম করে বলে কতই না আদিখ্যেতা।টিফিন বেলায় মায়ামণির বালিচরে পরস্পর প্রেমপত্র বিনিময় করে। আরও কত কী!আজ স্বপ্ন একেবারে পল্লীপুরের দুয়ারে হাজির।খুশি হয়ে মনে মনে লোকনাথকে প্রণাম জানায়।
যে সকল বন্ধুদের প্রেমিকা আছে,তারা নিজেদের ফেমাস মনে করে।আবভাবে মনে হয় যেন আকাশের চাঁদ ধরে ফেলেছে।তারাই যেন জীবকূলে শ্রেষ্ঠ।কেননা একজন মেয়েকে প্রেমিকা হিসেবে পেতে যথেষ্ট কাঠখড় পুড়তে হয়।
কুশন মুক্ত মনা ও স্পষ্ট বক্তা।কিন্ত ব্যক্তিগত পছন-অপছন্দের বিষয়ে ভীষণ চাপা।সে ভালোবেসে দেখতে চায় যে এর মধ্যে কী আছে।নইলে বড় হবার পর আপশোস থাকবে।
নিছক এমন ভাবনা থেকে সাঁকো পাড়ার মেয়েটিকে ভালোবাসতে শুরু করে। কলারসহ সাদা শার্টের উপর খয়েরি রঙের টেপ গায়ে কুঁড়ি হেঁটে ঘরে ফিরছে। পিঠে নীল-কালো বইয়ের ব্যাগ।বিদ্যালয় ছুটির পর যে যার মত ঘরে ফিরছে।পেছন পেছন কুশন হাঁটছে।কুঁড়ি মাথা ঘুড়িয়ে মাঝে মাঝে তার দিকে চোরা নজরে তাকায়।তাদের  দুজনের মধ্যে মাত্র ১০-১১ ফুট পথের ব্যবধান।হাঁটার গতি বাড়িয়ে তার সমান্তরাল হতেই কুশন বলে “তোমায় আমি ভালোবাসি।
কী!
কুশন আবার ভীত কণ্ঠে “তোমায় আমি ভালোবাসি।
কুঁড়ি মুখটা তুলে কুশনের সরল মুখ পানে চেয়ে মৃদু হেসে বলল “ও, তাই বুঝি!
“ছয়মাস ধরে বয়ে চলা জগদ্দল ভার নেমে গেল।বেশ হাল্কা লাগছে।“কুঁড়িকে তার মনের ইচ্ছার কথা বলতে পেরেছে বলে খুব খুশি।“খুব ভালো হবে আমাদের বণ্ডেজ।আমি একাদশ আর কুঁড়ি সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। বরাবরের মত পরের দিন সাত সক্কালে কুশন দাড়িয়ার ভিটায় ছগলের পাল ছেড়ে দিয়ে ইংরেজি গ্রামার প্র্যাকটিস করছে।ভিটার দক্ষিণ সীমানা তেমাথায় কুঁড়ি স্থীর ভাবে দাড়িয়ে থাকে।ঘনঘন কুশনের দিকে তাকায়।লাভ ইশারা দিয়ে ঘরে ফিরে যায়।প্রায় প্রতিদিন ফুলছাপা ফ্রক গায়ে ঐ তেমাথায় নরম ঘাসের উপর দাড়িয়ে থাকে।মাত্র তিনশো মিটার দূর থেকে কুশনকে ফলো করে। কুশন দাড়িয়ার ভিটায় খেতের কাজ মহা আনন্দে করে।কুঁড়িকে না দেখতে পেলে তারও ভেতরে ভেতরে খারাপ লাগে। একদিন কুঁড়ি তেমাথায় একটি চিঠি মাটির ঢেলা দিয়ে চেপে রেখে ঘরে প্রবেশ করল। সাঁকো পাড়ার তেমাথা থেকে সবসময় কুঁড়ি লক্ষ্য রাখত – সে কথা আগেই বলা হয়েছে।কুশন তা পকেটে ভরে নিজের লেখা পত্রটি সেখানে রেখে মাটির ঢেলা চেপে 
দিয়ে ফিরে যায়। আমগাছের শীতল স্নীগ্ধ ছায়া ঘিরে রাখে কুশন-কুঁড়ির গোপন সম্পর্ক।পাশের বাঁশঝাড়ে রঙবে রঙের পাখিরা এসে বসে।তারই কোলে বেলগাছ দুহাত বাড়িয়ে পাহাড়া দেয়।নির্জন দুপুরের সৌর-তরঙ্গ মায়াজাল ছড়িয়ে দেয়।ভেটি,কাঠমালতী,আকন্দ আগাছার ভেতর থেকে মাথা তুলে অভিনন্দন জানায়।কুশন-কুঁড়ির পরস্পর ভাব বিনিময়ে ভিটায় পবিত্র স্বর্গীয় আবহ সৃষ্টি হয়। শরৎকাল।চারিদিক কাশফুল হিমেল বাতাসে দুলে চলে।দুদিন ধরে কুশনকে ভিটায় দেখা  যায়নি।কুঁড়ি প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয়ে পরে।“কুশনের খারাপ কিছু হয়নি তো? নাকি কোন বিপদে পরেছে।  আরও সাত-পাঁচ ভাবতে থাকে।
মহালয়ার ছুটি।স্কুল বন্ধ।সময় কাটেনা।এমনিতে গতদুদিন ধরে কুশনের সাথে দেখা হয়নি বলে মন খুব খারাপ।বারংবার ঘর থেকে বেরিয়ে ঐ তেমাথায় এসে দাড়ায়। কুশনকে দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়ে ঘরে ফিরে যায়। বেলা ঠিক দুটোর দিকে হঠাৎ নজরে পরে যে কুশন গাছের ছায়ায় বসে বই পড়ছে। কোনকিছু না ভেবে সটান তার কাছে হাজির হয়।কুশন হতচকিত খেয়ে যায়। তোমার কি  লজ্জা সরম কিছু নেই।এইভাবে…যদি কেউ দেখে ফেলে।
কুঁড়ি শুষ্ক ঠোঁটে চোখ বড় করে বলে ‘লজ্জা!’ “আমার কষ্টের চেয়ে মান-সম্মান 
তোমার কাছে বড়?
কুশন চিন্তিত বদনে বলল, “বলবে তো কী হয়েছে?কী শরীর খারাপ?নাকি কেউ বকাঝকা করেছে? একটা বিরাট মাপের চিঠি কুশনের দিকে এগিয়ে দিয়ে আস্তে করে বলল, “সব জানতে  পারবে,এটি পড়বে। কুশন খানিক অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে পত্রখানা ইংলিশ কম্পানিওন বইয়ের মাঝে  রেখে কিছু একটা বলবে এমন সময় তার কথা থামিয়ে কিছুটা কানের কাছে মুখ এগিয়ে  ফিসফিস করে বলল, “আজ বিকেলে চার্চের ফরেষ্টে দেখা করবে।কথা আছে,” বলেই জোরকদমে  হেঁটে ফিরে গেল।
কুশন চিন্তিত হয়ে পরল।“কী যে বলবে!কোন সমস্যা নয় তো!” আরও অনেক কিছু  ভাবতে লাগল।
“হ্যাঁ বলো, কী জন্য ডেকেছ?”
“কেন?’তুমি কিছু জানো না!”
‘আমি!’ কী হয়েছে সরাসরি বলো!”
‘তুমি গতদুদিন কোথায় ছিলে?’
‘বাড়িতে।‘
বাড়িতে ছিলে?
‘হ্যাঁ,বাড়িতে ছিলাম।‘
‘ও…আচ্ছা!’তুমি জানোনা যে তোমার সাথে দেখা না হলে পড়া, খুদা ও ঘুম তিনটেই 
পালিয়ে যায়?’
‘জানি।‘
‘তবে?’
‘বলছি,বলছি!তুমি মাথা ঠাণ্ডা করে পাশে বসো,সব বলছি।‘
কুঁড়ি মুখ ভেঙচি কেট কুশনের ডান পাশে বসল।
‘বলো,এই দুদিন কী এমন যুদ্ধ জয় করে ফিরলে?’
কুশন উদাস ভাবে বলে,”আসলে জ্যাককে নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম।“
কুঁড়ি খানিকটা চিন্তিত হয়ে,”কী হয়েছে জ্যাকের?”
‘তুমি তো জানই যে জ্যাক আর আমি দুজন মিলে রাতে বাড়ি পাহাড়া দিই।পড়তে পড়তে আমার রাত সকাল হয়,আর জ্যাকের ঘেউ ঘেউ করতে করতে ভোর..।‘
‘এটা কি নতুন কিছু?’
‘না, নতুন কিছু নয়।‘ আবার পুরাতনও নয়।‘
‘মানে?’
“দেখো,এমনিতে পাড়ার ঐ দুই চোরের অত্যাচারে নাজেহাল সবাই।হালের মহিষ জোড়া চুরি করার ছক বহুদিনের।কিন্ত পূরণ না হওয়ার জন্য জ্যাকের উপর রাগ ছিলই।সকাল বেলা আমি ভিটার আসব বলে বই,খাতা ও বস্তা হাতে নিয়ে বের হব, এমন সময়…!”(কণ্ঠ  কান্নায় জড়িয়ে যাচ্ছে)
কুশন চোখের জল চোখেই লুকিয়ে বলে,”এমন সময় দেখি জ্যাক দেউরির গলিতে এসে  দাড়িয়ে হা করে আমার পানে তাকিয়ে রয়েছে।চোখের নীচ এবং নাকের উপর থেকে তাজা  রক্ত ঠিকরে পড়ছে।“’দিদি দেখা মাত্রই চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে। জ্যাক ব্যাথাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর চোখের দুপাশ গড়িয়ে জল পরছে।নাকের  উপর ধারালো অস্ত্রের গভীর ক্ষত।‘
 ‘বুঝতে পারছি তোমাদের পাড়ার ঐ চোর দুটি ছাড়া একাজ অন্য কেউ করবে না – এটা  সকলের জানা। তারপর?’ ‘তারপর ক্ষতস্থান ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে হলুদ  লাগিয়ে দিই।‘
‘আহারে খুব খারাপ লাগছে বেচারির জন্য।তোমার মনে আছে একদিন আমার চিঠিটা জ্যাক কীভাবে মুখে পুরে সারা ভিটা ছোটাছুটি করল।তুমি কিনা সেই রেগে গেলে।আমি তোমায় শান্ত হতে বললাম।তারপর বাবা,সোনা কত কী বলে আদর দিয়ে তবেই সেই চিঠি উদ্ধার করি।নইলে মাঠের সবাই জেনে যেত।‘প্রায দেড় বছর ধরে কুঁড়ি-কুশনের প্রেমে সাক্ষী থেকেছে এই দাড়িয়ার ভিটা। প্রেম ক্রমশ অসহ্য হয়ে ওঠে কুশনের জীবনে।কুঁড়িকে আর আগের মত স্বপ্ন  সুন্দরী মনে হয়না।দিনে দিনে আকর্ষণ হ্রাস পায়।রূঢ় বাস্তবের নিকট  প্রেম-ভালোবাসা ক্রমশ ফ্যাকাশে মনে হতে লাগল।তদুপরি কুঁড়ি বিয়ের জন্য চাপ  দিতে থাকে।এমতাবস্থায় সম্পর্ক অভিশপ্ত বলে মনে হয়।যে কুঁড়ির প্রেমে পরতে  চঞ্চল হয়ে উঠেছিল,সেই কুশন এখন সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যেতে মরিয়া।একবার চোখের  দেখা পেতে সারাদিন কাটিয়ে দিত।আজ সে সম্পর্ক থেকে নিস্কৃতি পেতে তৎপর।
‘প্রেমের সাধ যথেষ্ট পেয়েছি আর নয়।‘ তার আরও মনে হল যে ‘ভালোবাসা ক্যারিয়ার ধ্বংসের হাতিয়ার।নিজ পায়ে দাড়াতে  না পারলে প্রেম নিরর্থক।‘ চরম বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে কুশন কয়েকশো কিমি দূরে  পড়াশোনায় মগ্ন হয়ে পরে।অল্পকিছু কালের মধ্যে শিক্ষকতার একটি চাকরিও পেয়ে যায়।
ইতিমধ্যে কুঁড়ি পল্লীপুরের এক যুবককে বিয়ে করে সংসার পেতেছে।তাদের একটা আড়াই বছরের কন্যা সন্তানও আছে।
কিছুদিন আগে কুশন একটি ভালো মানের পত্রিকায় (পৃথিবীর পাতা) ১৫০০-২০০০ শব্দের মধ্যে জেলাভিত্তিক গল্প লেখার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। কিন্ত কীভাবে গল্প নির্মাণ করবে বা গল্পের বিষয়বস্তু কী হবে – তা ভেবে না পেয়ে কুশন উদ্বিগ্ন হয়ে পরে। হাতের কাছে গল্পের কোন উপকরণ না পেয়ে কুশনের গল্প লেখার ইচ্ছা বুঝি  অপূর্ণ থেকে যায়।সে সারাক্ষণ ভাবতে থাকে কি নিয়ে গল্প লেখবে।অবশেষে সন্মুখে কিছু না পেয়ে নিজের কৈশোর জীবনের প্রেম নিয়ে গল্প লেখবে বলে মনস্থির করে।
বিষয় তো ঠিক হল কিন্ত লেখবে কীভাবে?কুঁড়ির সাথে যে মধুর প্রেমের সম্পর্ক,তা কি সত্যি সত্যিই ততটা আকর্ষণীয় ও আনন্দঘন করে ব্যক্ত করা  সম্ভব?পরক্ষণেই ভাবল চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি নেই।যেমন ভাবা তেমনি শুরু।
কীভাবে গল্পের শুরু করবে – তা কোনোভাবে যেন খেই পাচ্ছিল না।খুব সমস্যায় পরে গেল।সেই সমস্যার সমাধান অবশেষে পেল।কুশন স্থির করে যে প্রতি রবিবার ছুটির দিনে ফেলে আসা পল্লীপুরে গ্রামের বাড়ি যাবে।সেই মত দাড়িয়ার ভিটার আল ধরে চারিদিকে হাঁটাহাঁটি করে।বাঁশঝাড়ের ছায়ায় মাদুর পেতে বসে।সাঁকো পাড়ার তেমাথায় স্থির ভাবে তাকিয়ে থাকে।কুঁড়িকে কাল্পনিক ছবিতে হৃদয়ে ধারণ করে।তাকে উদ্দেশ্য করে লেখে আনা চিঠি সেই তেমাথায় রেখে ঢেলা চেপে রেখে দেয়। সন্ধ্যায় পুনরায় শহরের বাড়িতে ফিরে আসে।আবার পরের সপ্তাহে একইরকম ভাবে কুশন দাড়িয়ার ভিটায় উপস্থিত হয়।
বর্ষার ছুটি চলছে।বিদ্যালয় বন্ধ।কুশন এবার স্বপরিবারে গ্রামের বাড়ি চলে  আসে।সময়মত স্নান,খাওয়া, ঘুম নেই।চল্লিশ উর্দ্ধ কুশন সত্যি সত্যিই কুঁড়ির সাথে যেন দ্বিতীয় পর্বে প্রেম করছে।এই প্রেম কেবল অনুভবে, কল্পনায়।তবু যেন ভেতরে ভেতরে নীরবে ঝড় বয়ে যাচ্ছে কুশনের হৃদয়ের উপর।কুশনের আচরণে কয়েকদিনে বদল দেখা দিল।তার চোখে-মুখে গভীর বেদনার ছাপ স্পষ্ট।প্রেমের গল্প লেখতে গিয়ে কুশন অজান্তেই কুঁড়ির কৈশোরের প্রেমিক হয়ে ওঠে।তার স্বভাবসিদ্ধ আচরণে অনেক বদলের আগমন দেখা দিল।তাকে ঘিরে পল্লীপুরের গ্রামবাসীদের বাড়তি কৌতূহল দেখা দিল।
বহুকাল আগের পুরাতন আম গাছটি আর নেই।গাছটি কেটে ফেলা হয়েছে।সেখানে হলুদ চাষ করা হয়েছে আমের শুকনো ঝরা পাতার ভেতর থেকে ঝিঁঝিঁ পোকা আর ডেকে ওঠে না।কাঠমালতী,আকন্দ যেন শোকস্তব্ধ।ভেটি বন জৌলুস হারিয়ে মাথা নুইয়ে আছে।কুশন সারাক্ষণ দাড়িয়ার ভিটায় পড়ে থাকে।কখনও কখনও সাঁকো পাড়ার তেমাথায় উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোড়াঘুরি করে।তবে ভিটার দক্ষিণ পাগাড়জুড়ে কদম গাছে রঙবে রঙের পাখিরা আসে।বাদুর আগের মতই ডালে পা লটকে ঝুলে পরে।বেগুন খেতে বুলবুলিরা দল বেধে মজা করে।কুশন মনে মনে ভাবে সবই যেন একইরকম আছে,কেবল কুঁড়ি অনুপস্থিত।
ভাদ্রের বাদল বেলায় কলা গাছের নীচে গিয়ে দাড়ায়।কুশন উদাস দৃষ্টিতে গভীর মায়ায় তেমাথার দিকে তাকিয়ে থাকে।কুঁড়ি সত্যি সত্যিই সেখানে হাজির হয়।সেই একই ফ্রক গায়ে দাড়িয়ে আছে।তাকে লাভ ইশারা দিচ্ছে।পাশের ঘন সবুজ জঙ্গল থেকে কোকিল ডাকছে।রবির কোমল তরঙ্গ পিঠে ভর দিয়ে সারা ভিটা কুশন-কুঁড়ির গোপন সম্বন্ধ যেন ভেসে বেড়ায়।পলি ভিটের নরম মাটি যেন তাদের দুজনের একান্ত ভালোবাসার আলপনা এঁকে চলে।
কুশন আজ সত্যি সত্যিই আঠাশ বছর আগের দিন ফিরে পেয়েছে।কুঁড়িকে এতো বছর বাদে দেখতে পেয়ে সে বেসামাল হয়ে পরে।খুশিতে খুব চিৎকার করে ডেকে ওঠে – “ও আমার কুঁড়ি।“ঘন সবুজে প্রতিধ্বনি হয়ে সেই শব্দে আকাশ বাতাস কেঁপে ওঠে।কুশন আবার বলে – “তুমি শুনতে পাচ্ছো?আমি তোমার কুশন।“মাঠের কৃষাণ কৃষাণিরা ছুটে আসে।কাছাকাছি কেউ নেই।তারা সকলে অবাক হয়ে পরস্পর পরস্পরের মুখের দিকে তাকায়। সাঁওতাল কৃষাণিরা নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে বলাবলি করছে যে “কুশন মাস্টারের  মাথা খারাপ হয়েছে।“ বেশ কিছুক্ষণ বাদে সংবিৎ ফিরলে কুশন ধীরে ধীরে ঘরে ফিরে আসে।

লেখা পাঠানোর নিয়মাবলী

আপনারা আপনাদের মূল্যবান লেখা নির্দ্বিধায় আমাদের কাছে পাঠাতে পারেন। আমরা তা আমাদের অনলাইন ম্যাগাজিনে প্রকাশ করব।

ইমেল আইডি: contact.okopotanusandhan@gmail.com

লেখার ফরম্যাট: অভ্র ইউনিফাইড টাইপ কিপ্যাডে টাইপ করে লেখা পাঠাতে হবে।

ইমেলে যা উল্লেখ করবেন: আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং কোন ক্যাটাগরিতে লিখছেন তা উল্লেখ করতে ভুলবেন না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top