বিনাশিনী- চৈতালি পাল || ছোটোগল্প || অকপট অনুসন্ধান

0
বিনাশিনী- চৈতালি পাল 



ভোর চারটে কিছুক্ষণ আগেই  অ্যালার্মের শব্দে রিনির ঘুমটা ভেঙে গেলেও চোখ বুজে আসছিল ঘনঘন কারণ চারটে বাজার পাঁচ  মিনিট আগেই অ্যালার্মটা দেওয়া ছিল ঘড়িতে চারটের সময়েই রিনি রেডিওর শব্দটা জোর করতেই কানে ভেসে এলো বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের "মহিষাসুরমর্দিনী" যার গলার স্বরেই দেবী পক্ষের সূচনা, আজ যে মহালায়া প্রতি বছরের মতো বছরেও বাড়ির সকলের মতো রিনিও ভোরে উঠে আধো আধো ঘুম চোখে মহালয়া শুনছে মহালয়ার রেশ ধরেই দুর্গাপুজো উপস্থিত,রিনির ঠিক এই কথাটা মনে হতেই মা কে প্রশ্ন করল," মা প্রতিবছরের মতো বছরের দুর্গা পুজো হবে?" মা রিনির কথার উত্তরে বললেন,"কেন হবে না রে রিনি! পুজো তো হবেই মা দুর্গা বছরে একবারই তো নিজের বাড়িতে আসতে পারেন নিজের বাড়ি আসতে কার না ভালো লাগে বলতো"

 মা মুখ থেকে কথাটা শুনেই রিনির চোখে মুখে আনন্দের ভাব ফুটে উঠল রিনিদের বাড়িতে প্রতিবছর দুর্গাপূজা হয় বনেদি বাড়ির পুজো বর্তমানে সচরাচর দেখা যায় না কিন্তু রিনির বাড়িতে সাবেকিয়ানা বজায় রেখেছেন তার বাবা দাদু দুর্গা পুজো মানেই তো এক সপ্তাহ আগে থেকেই বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা, খাওয়া-দাওয়া, ঠাকুরদালানে আলপনা দেওয়া থেকে শুরু করে মা দুর্গার আগমন পর্যন্ত সমস্ত কাজেই রিনি অংশগ্রহণ করে থাকে কিন্তু প্রতিবছরের মতো এবছরও বাড়িতে পুজো হবে ঠিকই কিন্তু আড়ম্বরতা হবে না বর্তমান পরিস্থিতিতে মহামারীর কারণে বাড়িতে লোকজন কম সংখ্যকই আসবে, আত্মীয়স্বজন কেউ - আসতে পারছে না বছরের পুজোর মন খারাপ ছেলে মেয়েরাও আসতে পারছে না বছরের পূজোয় রিনির তাই বড়ো মনখারাপতার সমবয়সী বন্ধুরাও কেউ আসতে পারছে না তাদের বাড়িতে যাদের ছাড়া রিনি পূজোয় মজা করবে সে  ভাবতেই পারছে নারিনিদের পাড়ায়  কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তাদের বাড়ির পুজো বন্ধ করে দেওয়া হবে বাড়ির সকলে  খুবই চিন্তিত বিষয়ে প্রতিদিনই পূজো সংক্রান্ত জটলা তৈরি হচ্ছে তাদের বাড়ির দুর্গা পুজোকে ঘিরে 

সেদিন দুপুরের পর রিনি ছাদে একাই খেলছিল ঠিক সেই সময়েই রিনির দৃষ্টি গেল রাস্তার দিকেরিনি দেখতে পেল তার বাবা দাদুর সাথে কয়েকজন পাড়ার ছেলেরা মিলে বেশ উচ্চস্বরেই  কথাবার্তা বলছেন  রিনি বেশ  দূরে দাঁড়িয়ে বিষয়টি  পর্যবেক্ষণ করলেও  বুঝতে পারছিল না কিছুক্ষন পরেই রিনি দেখল তার বাবা দাদু খুবই চিন্তিত হয়ে বাড়িতে ঢুকছে 

রিনি ছাদ থেকে লাফাতে লাফাতে রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ে এলো তার বাবার কাছে রিনির বাবা মেয়েকে দেখেই নিজেকে সামলাতে পারলেন নাকেঁদেই ফেললেন রিনি সেই মুহূর্তে হতবাক রিনি ভাবছে মনে মনে বাবা তাকে দেখে কাঁদছেন কেন? বাবা তখন রিনিকে কাছে ডেকে বললেন, "আমি শেষ রক্ষা করতে পারলাম না রে রিনি,আমাদের বাড়িতে মা দুর্গা বছরে আসছেন না "কথাটা শুনেই  রিনি উচ্চস্বরে কাঁদতে শুরু করল কান্না থামানোর সাধ্য বাড়ির কারোর নেই সারারাত ধরে রিনি দুচোখের পাতা এক করতে পারল না চেষ্টা করেও 

চারদিন পরেই সকালে রিনি তার ঘর থেকে শুনতে পেল তার মামার গলার আওয়াজরিনি ভাবছে সে স্বপ্ন দেখছে নাকি! মামা  দেশে থাকেন না প্রায় সাত বছর হলমামা হঠাৎ আবির্ভূত হলেন কোথা থেকে এটা ভেবেই ঘর থেকে বেরিয়ে  রিনি এক তলায় এসে দেখে তার মামা সপরিবারে উপস্থিত রিনি খুবই খুশি হল  মামাকে দেখে এত খুশি সে কোনোদিনই হয়নি যা সে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছে না রিনির  মামা কলকাতায় ফিরেছেন রিনিদের বাড়ির দূর্গাপূজোর টানেবিদেশে সাত বছর থাকলেও কলকাতার দুর্গাপূজা ভুলে যাওয়ার সাহস তিনি দেখান নি কিন্তু রিনির পরমুহূর্তে মনে হল বছরে তাদের বাড়িতে পুজো তো নিষিদ্ধ করা হয়েছে কী করে হবে দুর্গাপুজো!রিনির মামা পেশায় উকিলতিনি বিদেশে থাকেন কাজের সূত্রেই

মা এর মুখে পূজো সংক্রান্ত  সমস্যার কথা শুনেই মামা স্থির করলেন পাড়ার সকল সদস্যদের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন যথারীতি পাড়ার ক্লাবে আলোচনা সভার আয়োজন করা হলো  রিনির বাবা, দাদু মামার সঙ্গে দুর্গাপুজো করতেই হবে রিনির মামা বললেন সকলের উদ্দেশ্যে সকলে তা মেনে নিতে চাইছেন না পাড়ার মধ্যে অতিরিক্ত মানুষের সমাগম হবে বিষয়টি তারা কেউই মেনে নিতে চাইছেন না রিনির বাবা দাদু দুজনেই নির্বাক হয়েই বসেছিলেন রিনির মামা বললেন অবশেষে," দুর্গাপুজো আমাদের সকলের পুজো পুজো হলে আপনারা কি খুশি হবেন না? আমি যদি বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসি দুর্গাপুজোর টানে তাহলে আপনারা দেশে থেকেও মা দুর্গার পুজোতে বাধা সৃষ্টি করছেন" মামার কথাটি শুনে অনেকের গলার স্বর মৃদু করলেন যারা উত্তেজিত হয়ে  উঠেছিলেন এবং  তারা বললেন "হ্যাঁ তা আপনি ঠিকই বলেছেন মামা বাবু, আপনি যদি বিদেশ থেকে আসতে পারেন এদেশে তাহলে মা দুর্গা কেনই বা আসবেন না" রিনির মামা সে উত্তরে বললেন, "পুজো হবে সমস্ত  স্বাস্থ্য বিধি মেনেই আমাদের বাড়ির পুজো আসলে তো সকলেরই পুজো মা দুর্গাকে তার নিজের বাড়িতে বছরে  একবার আসার সুযোগ করে দিন তার আসার পথে বাধা দেবেন না আপনারা "সকলেই তখন রিনির মামার কথার যুক্তিটি বোঝার চেষ্টা করলেন এবং রাজি হলেন পুজোর আয়োজন করার জন্য   
              
রিনি খবরটা পেয়েই আনন্দে কেঁদে ফেলল মনে মনে দুর্গা মাকে বলল," মা তুমি এসো আমাদের বাড়িতে, তোমার জন্য আমরা সকলেই অপেক্ষারত সমস্ত মহামারীর বিনাশ ঘটাতে   একমাত্র তুমিই পারবে মা, তুমিই পারবে"





লেখা পাঠানোর নিয়মাবলী

আপনারা আপনাদের মূল্যবান লেখা নির্দ্বিধায় আমাদের কাছে পাঠাতে পারেন। আমরা তা আমাদের অনলাইন ম্যাগাজিনে প্রকাশ করব।

ইমেল আইডি: contact.okopotanusandhan@gmail.com

লেখার ফরম্যাট: অভ্র ইউনিফাইড টাইপ কিপ্যাডে টাইপ করে লেখা পাঠাতে হবে।

ইমেলে যা উল্লেখ করবেন: আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং কোন ক্যাটাগরিতে লিখছেন তা উল্লেখ করতে ভুলবেন না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top