তৃতীয় পর্বের পর...
১৯২৪ সালে গান্ধীজী জলপাইগুড়ির উপর দিয়ে রংপুর ও দিনাজপুর গিয়েছিলেন। গান্ধীজীর পদধুলিতে জলপাইগুড়ির মাটি সেদিন পবিত্র হয়েছিল।সুভাষচন্দ্র জলপাইগুড়িতে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সম্মেলনে প্রধান অতিথি নির্বাচিত হন। দার্জিলিঙে অসহযোগ ও খিলাফৎ আন্দোলন সক্রিয় রূপ নিয়েছিল।আব্দুল হামিদ নামে এক খিলাফৎ কর্মী এই সময় প্রচারের কাজে দার্জিলিং আসেন।দার্জিলিংয়ে তাকে এক বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়।১৯২১ সালে দার্জিলিংয়ে গড়ে ওঠে গোর্খা লিগ।এর নেতা ছিলেন আগম সিং গিরি।গোর্খা লীগও ব্রিটিশ বিরোধী সংগঠন ছিল।অসহযোগ আন্দোলনের সময়েই চা- শ্রমিক ও কৃষকদের মধ্যে বিদ্রোহের লক্ষণ দেখা যায়।১৯২১ সালের ৩ই মে একদল লোক শিলিগুড়ির অদূরে মাটিগাড়া হাট লুট করে।হাটে আক্রমণের লক্ষ্য ছিল ধনী ব্যবসায়ী মহাজন ও কুসীদজীবীরা।
Mahatma Gandhi Image Source: Internet
১৯২৫-এ গান্ধীজী দার্জিলিঙে আসেন।তার আগমনে দার্জিলিঙে আলোড়নের সৃষ্টি হয়।১৯৩২ সালের জানুয়ারিতে জেলা কতৃপক্ষ শিলিগুড়ির কংগ্রেস দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলো।সেই তালা ভেঙে দরিদ্র শ্রমজীবি জিয়াচ লোহার কারাবরণ করেন।এ সময় ব্রজেন্দ্রকুমার বসুরায় মাটিগাড়া হাটে গ্রেপ্তার হন।এক মাস তার সভায় যোগদান নিষিদ্ধ হয়।তবে দার্জিলিঙে অস্পৃশ্যতা বিরোধী আন্দোলন খুব একটা বিস্তার লাভ করেনি।তবে আইন অমান্য আন্দোলনের পর ত্রিশের দশকের শেষ দিকে জেলা কংগ্রেস কমিটিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব দেখা যায়।জে. পি ব্যারেট ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি।অন্যান্য নেতৃবৃন্দ হলেন বাসুদেব ওঝা, এম. এস. লামা, উমা দত্ত শর্মা, জগদীশ ঘোষ, শিবকুমার দাস প্রমুখরা।
Non-Cooperation-Mahatma Gandhi Image Source: Internet
উত্তরবঙ্গের দার্জিলিংয়ের দল বাহাদুর গিরি, সত্যেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার, আবদুল সাজিদ প্রমুখরা স্বাধীনতা আন্দোলনকে সক্রিয় করে তোলে।মালদহেও স্বাধীনতা আন্দোলন দ্রুত প্রসারিত হয়।সুভাষচন্দ্র মালদহে এসেছিলেন এবং মালদহে জনসভায় তিনি বক্তব্য রাখেন।মালদহে দেশাত্মবোধক ইস্তেহার বিভিন্নভাবে বিপ্লবী গুপ্ত সমিতিগুলির সদস্যদের মাধ্যমে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।এইসব ইস্তেহারে ব্রিটিশবিরোধী প্রকাশ্যেই চালানো হতো।মালদহের বিপ্লবী ধরণীধর সরকার বিপ্লবী ইস্তেহার দেওয়ালে সাটাতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন।এই সময় মালদহে এসেছিলেন চিত্তরঞ্জন দাস,শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়,মুকুন্দ দাস,যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত প্রমুখরা।এদের পাদস্পর্শে মালদহের মাটি সেদিন ধন্য হয়েছিল।
Non-Cooperation-Movement Image Source: Internet
রায়গঞ্জের স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষেত্রে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাম হল প্রভাত চন্দ্র দাসগুপ্ত, নগেন্দ্র কিশোর সরকার, নিখিল চন্দ্র বসু, রাম পদ সেনগুপ্ত প্রমুখরা।প্রভাত চন্দ্র দাসগুপ্ত ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে যুগান্তর দলের সদস্যদের সঙ্গে বন্ধুক ছিনতাই এর অভিযোগে গ্রেপ্তার হন।তাকে নয় মাস দিনাজপুর জেলে বন্দি করে রাখা হয়।নগেন্দ্র কিশোর সরকার অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ১৯০৩-০৪ খ্রিস্টাব্দে বারীন ঘোষ জেলায় জেলায় ঘুরে তরুণদের জন্য শরীরচর্চারবহু আখড়া স্থাপন করেন।সেখানে নগেন্দ্র কিশোর সরকার লাঠি খেলা, ঘোড়ায় চড়া, ছোড়া খেলা, শিখেছিলেন।ব্রিটিশ বিরোধী কাজের জন্য ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ১৯ এফ ও ২০ বি আর্মস অ্যাক্ট অনুসারে তাকে ময়মনসিংহ শহর থেকে গ্রেপ্তার করেছিলেন।তিনি ময়মনসিংহ জেলে বন্দী ছিলেন পরে তাকে আলিপুর জেলে স্থানান্তরিত করা হয়।নিখিল চন্দ্র বসু ব্রিটিশ বিরোধী প্রচার চালাতেন।গ্রামে গ্রামে সাইকেল চড়ে গ্রামবাসীদের বলতেন, 'ব্রিটিশদের তৈরি লবণ খাবে না'।রামপদ সেনগুপ্ত দিনাজপুর থানা কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক ছিলেন।তিনি ১৯২৩ সালে নাগপুর সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগ দেন।১৯৩২ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে দিনাজপুর জেলে তিন বছর কারারুদ্ধ থাকেন।
khilafat Movement, Image Source: Wikipedia
কালিয়াগঞ্জ এর পার্বতী চরণ ধর ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান স্বাধীনতা সংগ্রামী ছাত্রাবস্থাতেই তার স্বাধীনতা প্রীতি দেখা যায়।তিনি গুপ্ত সমিতির সদস্য ছিলেন। অবিভক্ত বাংলার নেপাল-ভুটান থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করা হত।একবার পার্বতী চরণ ধরকে রাইফেল কেনার জন্য কোচবিহারে পাঠানো হয়।তিনি বিভিন্ন স্বদেশী ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।তিনি কখনো বিদেশি দোকানের সামনে পিকেটিং, কখনো সরকারি ডাক লুঠ, কখনো কারো বাড়িতে ডাকাতি করে অর্থ সংগ্রহ করে বিপ্লবীদের সাহায্য করা,টেলিগ্রাফের তারকাটা,কখনো বিপ্লবীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ, কখনো বা পুলিশের চাকরি নিয়ে দুর্নীতি পরায়ন পুলিশ সুপারকে গুলি করা এসবই করেছেন।নিশীথ নাথ কুন্ডু, অশ্বিনী কুমার দাসের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে।সারা ভারত স্বাধীনতা সংগ্রামী সংস্থার সভাপতি তথা আন্দামান সেলুলার জেলের বন্দী মলয় ব্রহ্মচারী, শরৎ চ্যাটার্জি ও সুশীল চ্যাটার্জী সঙ্গে তার পরিচয় হয়।ব্রিটিশদের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য তিনি ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত আত্মগোপন করেছিলেন।
NETAJI Image Source: Wikipedia
পশ্চিম দিনাজপুরের (বর্তমান উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর) গান্ধীজী, নেতাজি এসেছিলেন।রায়গঞ্জে গান্ধীজি এসেছিলেন।রেলস্টেশনে গান্ধীজিকে দেখতে জনতার ভিড় উপছে পড়ে।সুভাষচন্দ্র রায়গঞ্জে আসতে পারেননি।তিনি ১৯২৭ সালে এবং তার আগে বালুরঘাট এসেছিলেন।তিনি সীমান্ত শহর হিলিতে যান।দিনাজপুরের অন্যতম নেতা অনিল বিশ্বাস, নিশীথ নাথ কুন্ডু সুভাষের সঙ্গে দেখা করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের নানা পাঠ তারা সুভাষের কাছে গ্রহণ করেন।
Front View of Cellular Jail Port Blair, Image Source: Wikipedia
দিনাজপুরের বিপ্লবী নেতা ভবেশ চন্দ্র বন্দোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত দিনাজপুরের বালুরঘাটে।কৈশোরেই জড়িয়ে পড়েন স্বদেশী আন্দোলনে।১৯৩০ সালে তিনি প্রথম কারাবরণ করেন এবং পরবর্তীকালে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত কয়েক দফায় প্রায় সাড়ে ছ' বছর বন্দি জীবন কাটিয়ে ছিলেন।অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য হিসেবে বিভিন্ন বিপ্লবী কর্মকান্ড ও রাজনৈতিক ডাকাতির সঙ্গে তিনি জড়িয়ে পড়েন।বালুরঘাটে পুলিশ কংগ্রেস অফিস দখল করে নেয়।বিনসিরা ও গোফানগরে পুলিশি অত্যাচার বৃদ্ধি পায়।গুপ্ত সমিতি গুলিও সক্রিয় হয়ে ওঠে।বালুরঘাটে মুকুন্দ দাসের স্বদেশী যাত্রাও অনুষ্ঠিত হয়।
Full view of Cellular Jail, Image Source: Internet
হোসেনপুরের চৌধুরী বাড়ির খোলাতে মুকুন্দদাস স্বদেশী গান গেয়ে ব্রিটিশ বিরোধী জনমত গড়ে তোলেন।১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে সরোজিনী নাইডু দিনাজপুরে সভা করেন। ড: কিচলুও দিনাজপুরে এসেছিলেন ১৯২৯- এ বিদ্রোহী কবি নজরুল দিনাজপুরে সভা করেন ও আবৃত্তি করেন।
লেখা পাঠানোর নিয়মাবলী
আপনারা আপনাদের মূল্যবান লেখা নির্দ্বিধায় আমাদের কাছে পাঠাতে পারেন। আমরা তা আমাদের অনলাইন ম্যাগাজিনে প্রকাশ করব।
ইমেল আইডি: contact.okopotanusandhan@gmail.com
লেখার ফরম্যাট: অভ্র ইউনিফাইড টাইপ কিপ্যাডে টাইপ করে লেখা পাঠাতে হবে।
ইমেলে যা উল্লেখ করবেন: আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং কোন ক্যাটাগরিতে লিখছেন তা উল্লেখ করতে ভুলবেন না।









